ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন

রাজনীতিবিদ, পুলিশ, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৬-০১-২০২৫ ০৮:৪৯:৪৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৬-০১-২০২৫ ০৮:৪৯:৪৭ অপরাহ্ন
রাজনীতিবিদ, পুলিশ, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
২০১৩ সালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া (৫৫) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ মোট ৯০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন।

রবিবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা রহমানের আদালতে এ মামলা করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে শেরেবাংলা নগর থানাকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শিব শংকর এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলার বাদী ভুক্তভোগী আলমগীর লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার উত্তর রায়পুর গ্রামের মরহুম আমিন উল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী।

মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম; সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল; ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস; সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; হাসানুল হক ইনু; হাসান মাহমুদ; আমীর হোসেন আমু; দিলীপ বড়ুয়া; কামরুল ইসলাম; আনোয়ার হোসেন মঞ্জু; রাশেদ খান মেনন; শ ম রেজাউল করিম; মোহাম্মদ আলী আরাফাত; আ ক ম মোজাম্মেল হক। 

আইনজীবীদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে— সুপ্রিম কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের দুদকের সাবেক আইনজীবী এম খুরশিদ আলম খান, এ্যাড. মোশাররফ হোসেন কাজল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. তুরিন আফরোজ, ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী, রানা দাশ গুপ্ত, মো. মোখলেছুর রহমান খান বাদল, জাহিদ ইমাম, তাপস কান্তি বল, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু ও হেমায়েত উদ্দিনকে। 

সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ, ফারজানা রুপা, মোজাম্মেল হক বাবু, এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সুভাষ সিংহ রায় ও একাত্তর টিভির মোজাম্মেল হোসেন বাবু। 

পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন— সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, বেনজির আহমেদ, হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ, ডিএমপি সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, শেরেবাংলা নগর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঃ আব্দুল মমীনসহ অনেকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬ টায় ব্যক্তিগত কাজে মিরপুর যাওয়ার উদ্দেশে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে যান। ওইদিন হরতালের সমর্থনে বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। এ সময় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলকারী ও পথচারী লোকজনদের উপর নির্বিচাররে গুলি বর্ষণ করেছিল। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা ছুটাছুটি শুরু করলে পুলিশ পথচারী ও মিছিলকারীদের হত্যার উদ্দেশে বেধড়ক মারধর করে আটক করেছিল। 

এজাহারে আরও বলা হয়, এরপর পুলিশ প্রায় ১১ জন পথচারীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। যাদের মধ্যে মামলার বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ, মাইন উদ্দিন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ইসমাইল, রাফাত, আব্দুস শহীদ ও আব্দুল বাসেতসহ ছয়-সাত জনকে পুলিশ হাত-পা বেঁধে নির্বিচারে গুলি করে। এর মধ্যে বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেইন ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ পুলিশের গুলিতে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। অপরজন মহিন উদ্দিন ওরফে মাঈন উদ্দিন পুলিশের গুলিতে গুরুত্বর আহত অবস্থায় দীর্ঘদিন চিকিৎসারত ছিলেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশ আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো বাদী আলমগীরসহ ১১ জনসহ এজাহার নামীয় ও ১৫০/১৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় নাশকতার পৃথক তিনটি মামলা করে তাতে গ্রেফতার দেখায়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন বিক্ষোভস্থল থেকে গ্রেফতার করে ভুক্তভোগী আলমগীরকে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসামি শেরেবাংলা নগর থানার সাবেক ওসি মুঃ আব্দুল মমীন বাদী আলমগীরের বাম পায়ে গুলি করে। এ সময় থানার এএসআই আসফাদ্দৌলা, এসআই মছিউর, এসআই কামাল হোসেন, এসআই বজলুর রহমান আলমগীরকে হত্যার উদ্দেশে রাইফেলের বাট, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে হাতে, কোমরে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত করে। 

অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, এরপর পুলিশ আলমগীরকে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিউিট ও হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ২ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোরে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ভুক্তভোগী আলমগীরের বাম পা কেটে ফেলা হয়। ফলে তিনি আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ ঘটনায় সে সময় দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশিত হয়।  গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর চিরতরে পঙ্গু হয়ে তিনটি মামলায় জেল হাজতে দীর্ঘদিন আটক থাকার পর জামিনে মুক্ত হন বাদী। 

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ